38.6 C
Dhaka,BD
May 20, 2024
OkeNewsBD
জাতীয় দেশজুড়ে রাজনীতি

বিএনএম-তৃণমূলের অনেক নেতা বিএনপিতে ফেরার পথ খুঁজছেন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেয়ে আলোচনায় চলে আসে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও তৃণমূল বিএনপি। দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ওই নির্বাচন বর্জন করলেও দলটির বেশ কয়েকজন নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য নতুন দুই দলে যোগ দিয়ে প্রার্থী হন। বিগত সংসদ নির্বাচনে সর্বমোট ২২০ প্রার্থী দিয়েছিল বিএনএম ও তৃণমূল। তবে বিজয়ী হওয়া তো দূরের কথা, তাদের কারও জামানতও টেকেনি। এ নিয়ে দুটি দলেই বিরাজ করছে হতাশা। নির্বাচনের পর থেকে এ দুই দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি কিংবা সাংগঠনিক কোনো তৎপরতা নেই। বিভিন্ন কারণে দুটি দলেই বিরাজ করছে নানা কোন্দল। সে কারণে উপজেলা নির্বাচনেও বিএনএম কিংবা তৃণমূলের কোনো প্রার্থী অংশগ্রহণ করেনি। এমন

পরিস্থিতিতে কোনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না বিএনপি ছেড়ে আসা অনেক নেতা। এ কারণে তাদের কেউ কেউ এখন পুরোনো দলে ফেরার পথ খুঁজছেন। যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান পেলে বিএনপিতে ফিরতে চান তারা। তবে সরকারের আনুকূল্যের আশায় দলছুট নেতাদের বিষয়ে হাইকমান্ডের কঠোর মনোভাবের কারণে তাদের জন্য সহসাই দরজা খোলার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কালবেলাকে বলেন, ‘নানা প্রলোভনে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে কিংবা বিএনপি ছেড়ে যারা অন্য দলে গিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন, দল তাদের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর। নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী অন্য দলে যাবেন, সুবিধা না পেলে আবার বিএনপিতে ফিরবেন—কারও জন্যই সে সুযোগ নেই।’

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপিবিহীন সংসদে প্রধান বিরোধী দল হওয়ার আশার কথা শুনিয়েছিলেন বিএনএম ও তৃণমূল বিএনপির শীর্ষ নেতারা; কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি। বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের বর্তমান ও সাবেক কিছু নেতা দল দুটিতে যোগ দিলেও হেভিওয়েট কোনো নেতা যাননি। দলীয় ‘নোঙ্গর’ প্রতীকে ঘোষিত ও ‘হিডেন’ মিলিয়ে বিএনএমের ৮৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও কেউই বিজয়ী হতে পারেননি। অন্যদিকে তৃণমূল বিএনপির দলীয় প্রতীক ‘সোনালী আঁশ’-এ ১৩৭ প্রার্থী ভোট করলেও কেউই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেননি। এজন্য অবশ্য ভোটে নানা অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ আনে দল দুটি।

বিএনএমের প্রতিষ্ঠাকালীন ৩১ সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বিএনপির সাবেক এমপি ড. আব্দুর রহমান। আর বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করা মেজর (অব.) মুহাম্মদ হানিফ ছিলেন দলটির সদস্য সচিব। যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন পিরোজপুর জেলা বিএনপির সাবেক নেতা ব্যারিস্টার সরোয়ার হোসেন। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ওই আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে বিএনপির সাবেক এমপি শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং ড. মো. শাহজাহান মহাসচিব পদ পান।

দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক কমিটির নেতারা বলছেন, ‘রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে বিএনএম গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কিছু লোক এসে সেই বিএনএমকে হাইজ্যাক করেছে।’

দলটির অনেক নেতার অভিযোগ, নির্বাচনের পর অভ্যন্তরীণ কোন্দল, কার্যক্রম না থাকাসহ নানা কারণে বিএনএম কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের মধ্যেই তৃণমূল বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসে। ভোটের আগ মুহূর্তে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর চেয়ারপারসন শমসের মুবিন চৌধুরী ও মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকারের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন দলের ৬০ প্রার্থী। তাদের অভিযোগ ছিল, দলের চেয়ারপারসন ও মহাসচিব তাদের নির্বাচনের মাঠে নামিয়ে দিয়ে খোঁজ রাখেননি। কেউ কেউ তাদের ‘জাতীয় বেইমান’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে দলের তহবিল থেকে টাকা তছরুপেরও অভিযোগ আনা হয়। তবে তৃণমূল বিএনপির পক্ষ থেকে তখন এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়।

তৃণমূল বিএনপির অভ্যন্তরীণ সেই কোন্দল নির্বাচনের পরেও অব্যাহত থাকে। দলটির একাধিক নেতা জানান, নির্বাচনের পরে দলের সব প্রার্থীকে নিয়ে মিটিং ডাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু তা হয়নি। এরপর কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিংয়ে দলের শীর্ষ দুই নেতাকে নির্বাচনের আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে বলা হয়; কিন্তু তারা হিসাব দেননি। এরপর তারা সিদ্ধান্ত নেন, বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে আর একসঙ্গে চলা যাবে না। কারণ, ভবিষ্যতেও তারা একই কাজ করবে। তাই শমসের মুবিন ও তৈমূর আলমকে দলের শীর্ষপদ থেকে সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। নেতাদের দাবি, তারা শমসের মুবিন ও তৈমূর আলমকে বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্বে তৃণমূল বিএনপিকে সাজিয়ে নতুন করে আগাতে চান।

বিএনপির সাবেক নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ২০১৫ সালে তৃণমূল বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০২৩ সালে তার মৃত্যুর পর তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করে গত ১৯ সেপ্টেম্বর দলটির জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিলে শমসের মুবিন চেয়ারপারসন ও তৈমূর আলম মহাসচিব নির্বাচিত হন। তারা দুজনই বিএনপির সাবেক নেতা।

বিগত জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আলোচনায় এলেও উপজেলার ভোটে অংশগ্রহণ করছেন না বিএনএম ও তৃণমূল বিএনপির কোনো প্রার্থী। তবে দল দুটির অনেক নেতার দাবি, নির্বাচন করার মতো তাদের অনেক প্রার্থী রয়েছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ কোন্দল, শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে অন্যদের দ্বন্দ্ব এবং সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ও কার্যক্রম না থাকায় নির্বাচন করার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে দুটি দলই।

জানতে চাইলে বিএনএমের মহাসচিব ড. মো. শাহজাহান কালবেলাকে বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন আমরা আমাদের প্রার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে রেখেছি। যদি কেউ দাঁড়াতে চায়, আমরা দলীয়ভাবে তাদের যেমন উৎসাহিত করছি না, নিরুৎসাহিতও করছি না।’

বিএনএমে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়টি নাকচ করে দেন দলের মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দলের নেতাদের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তবে এটা সত্য, বিএনএমে এখনো কাউকে চেয়ারম্যান করা সম্ভব হয়নি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনএমের নেতারা আবার বিএনপিতে ফিরে যেতে চান, এমন কোনো তথ্য তার জানা নেই। এ ব্যাপারে কেউ তাকে কিছু বলেননি। তবে এটা সত্য, আমাদের দলে এখন যারা আছেন, তারা সবাই শুরু থেকে বিএনএমে ছিলেন না। বিএনপিতে এখন যারা আছেন, শুরু থেকে তাদের সবাইও সেখানে ছিলেন না। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে দলবদল একটি চলমান প্রক্রিয়া। কারও ব্যক্তিগত চিন্তা-চেতনা ও স্বাধীনতা থাকতেই পারে।’

তৃণমূল বিএনপিতেও কোনো অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই বলে দাবি করেন দলটির চেয়ারপারসন শমসের মুবিন চৌধুরী। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘দলের নেতারা তাদের (শমসের ও তৈমূর আলম) শীর্ষপদ থেকে সরে যেতে বলেছেন—এমন কোনো কিছু তার জানা নেই। এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে শমসের মুবিন বলেন, যারা নির্বাচন করতে চায় দল তাদের মনোনয়ন দেবে।’

Related posts

আমরা এখনও শ্রীলঙ্কার মতো হইনি, তবে সাবধান: এম এম আকাশ

Asha Mony

চট্টগ্রামে এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে অনুপস্থিত ১৬৮৩

Asha Mony

রংপুর ছাড়া অন্য অঞ্চলে সামান্য বৃষ্টি ,ভ্যাপসা গরমে নাভিশ্বাস

admin